Ticker

6/recent/ticker-posts

সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড বনাম এসিডিটি/ A to Z about acidity


করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পরার
কিছু দিন আগের কাহিনি এটা।
হঠাৎ সৌমিক আমায় ফোন করে দেখা
করতে বলে।
আমি দেখা করলাম। ছেলেটা একদম রোগা
পাতলা হয়ে গেছে। মুখ শুকিয়ে কাঠ।
কোনো রস নেই চেহারায়। 
জানতে চাইলাম সমস্যাটা কোথায়।
সৌমিক আমাকে যা বললো, তা শুনে 
আমি আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।
ফেসবুকে ৬ মাসের প্রেম তার।
দিন রাত কথাবার্তা। মেসেজিং। 
প্রেম জমে খিল।
হঠাৎ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো করোনা ভাইরাস।
একের পর হাজার, তারপর আরো
বেশি মানুষ মারা যেতে লাগলো।
তাই সৌমিক ঠিক করলো তাদের দেখা করা উচিত। দেশে করোনা ভাইরাস এসে গেলে না জানি কত দিন ঘর বন্ধী হয়ে থাকতে হয়।
যেই বলা সেই কাজ। শুক্রবার দেখা করার ডেট 
ঠিক হলো। সৌমিক সারা রাত ঘুমাতে পারেনি
বিলকিসের জন্য। আমিও পারতাম না ওর জায়গায় হলে। ওহ, সৌমিকের গার্লফ্রেন্ডের 
নাম একটু সেকেলের হলেও চেহারা দেখার মত।
অত্যন্ত সুন্দরী। 
সৌমিক সারা রাত ঘুমাতে যেমন পারলো না
তেমনি কিছুই খেতে পারলো না।
সকাল বেলা উঠে এক পশলা বমি হলো
অতিরিক্ত উত্তেজনায়।
লাল টকটকে একটা শার্ট পরলো।
অত্যন্ত চমৎকার মফিজের মত লাগে সৌমিককে
এই শার্ট পরলে।
যাই হোক, খালি পেটে এক কাপ
চা পান করলো।
তারপর চলে গেলো সেই দেখা করার স্থানে।
বিলকিসের আসতে অনেক দেরি হলো।
হওয়ারই কথা।
প্রথম দেখা। একটু সাজগোজের ব্যাপার আছে।
এই সুযোগে সৌমিক দুইটা পুরি আর ডাউল
খেয়ে নিল। বড্ড খিদে পেয়েছে তো।
তারপর এলো সেই চরম মুহুর্ত। 
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বেজে উঠলো। 
ওপাশ থেকে দৌড়ে আসছে বিলকিস।
সৌমিক উচ্চস্বরে ধরলো গানঃ

"ওো আমার, বিলকিস গো।
এত দেরি কেনো হলো।"

সৌমিক যেই মুহুর্তে বিলকিসের হাত টা ধরতে যাবে, ঠিক তখনই পেটে মারলো
এক মোচড়। 
সৌমিক, বিলকিসের হাত ধরার পরিবর্তে 
নিজের পেট ধরলো চেপে।
ধুম করে একটা আওয়াজ হলো।
বোমা ফাটার মত আর কি।
কিন্তু গন্ধ টা বোমা ফাটার মত না।
কেমন জানি।

তারপর সৌমিকের ৬ মাসের প্রেমের ইতি ঘটে।
আমার চোখ দিয়ে এখনো পানি পড়ছে প্রিয় পাঠক বন্ধুরা।
এভাবে একটি নব্য প্রেমের 
সভ্য ইতি কিভাবে ঘটতে পারে?
এর জন্য দায়ী আসলে কে?
কে সেই বাংলা সিনেমার ভিলেন?
ভাই ও বোনেরা, ভিলেন আর কেউ নয়।
ভিলেন হলো, এসিডিটি।

চলুন এই সম্পর্কে কিছু জেনে নেই

আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি সমস্যা হচ্ছে, 'এসিডিটি'। গ্রাম বাংলায় যা গ্যাস্ট্রিক নামে পরিচিত। বর্তমানে এমন একটি ঘর খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে যে ঘর 'এসিডিটি' নামক রোগমুক্ত। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই এই সমস্যা মহামারী আকার ধারণ করেছে। আমেরিকান রিসার্চ সেন্টার অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির মতে, 
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশই গ্যাসের সমস্যায় ভুগছেন। 
প্রযুক্তিনির্ভর ও প্রতিযোগিতামূলক বর্তমান বিশ্বে আমরা শুধু কাজ নিয়েই ব্যস্ত থেকে ভুলেই যাই আমাদের দৈনন্দিন নিয়মকানুন গুলো, যার ফলেই আক্রান্ত হয়ে ভুগতে থাকি বিভিন্ন রোগে, যার মধ্যে একটি হলো 'এসিডিটি'।

এসিডিটি কি?

মানুষের পাকস্থলীতে প্রতিনিয়ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCl) নিঃসরণ হচ্ছে। খাবারের সময় হলে, খাদ্য দর্শন, খাদ্যের আস্বাদন বা কোন মুখরোচক খাবারের ঘ্রাণ বা মনে পড়লে এই নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, মানুষিক অবসাদ ইত্যাদি কারণে এসিড নিঃসরণের মাত্রা বাড়ে, আর এই অতিরিক্ত নিঃসৃত এসিড'ই পরবর্তীতেতে সৃষ্টি করে এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক। 

এসিডিটির ফলে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়ঃ

১) পেটের উপরের অংশে ব্যথা বা জ্বালা পোড়া
২) বুক জ্বালাপোড়া
৩) গ্যাস, বমিভাব, টক ঢেঁকুর
৪) মুখে দুর্গন্ধ
৫) পেট ফাঁপা, ক্ষুধামন্দা, অল্প খেলেই ভরপেট অনুভব।
৬) ওজন হ্রাস,পিঠে ও বুকে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।

এসিডিটি প্রতিরোধের উপায়ঃ

🤗এসিডিটির সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করতে হবে।
🤗ধারন ক্ষমতার এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি খেতে হবে। এবং এক ভাগ খালি রাখতে হবে।
🤗 চিনিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া যাবে না।
🤗 বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।
🤗 ফাস্ট ফুড/ স্ট্রেট ফুড/ ফ্রোজেন ফুড যথাসম্ভব না খাওয়াই ভালো।
🤗ঘুমাতে হবে ঠিকঠাক, মানুসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে।
🤗রাতের খাবার ঘুমানোর অন্তত ২ঘন্টা আগে সেরে ফেলুন। খাওয়ার পর অল্প হাটাহাটি করুন।
🤗অবশ্যই ধূমপান ও মাদকদ্রব্য থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
🤗অতিরিক্ত তেল ও মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা।
🤗 ভারী খাবার যেমন, মাংস, বিরিয়ানি, চাইনিজ রাতে না খেয়ে সকালে বা দুপুরের মেন্যুতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
🤗 ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যা ল্যাক্সিটেভ হিসেবে কাজ করে গ্যাস সৃষ্টিতে বাঁধা প্রদান করে এমন খাদ্য নিয়মিত খেতে হবে।

কিছু ঘরোয়া উপায়ঃ

☺ তুলসী পাতা খেতে পারেন রস করে (প্রতিদিন ৫-৬টা)। এছাড়াও পুদিনা পাতার রস খেলেও এসিডিটি ও বদহজম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
☺ ঠান্ডা দুধ পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে এসিডিটি থেকে মুক্তি দেয়। দুধে থাকে Ca যা পাকস্থলীতে এসিড তৈরিতে বাঁধা দেয়।
☺কলায় প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকে।
এটি একটি প্রাকৃতিক এন্টাসিড।
গ্যাস তৈরিতে বাধা দেয়।
☺খেতে পারেন টক দই।

মনে রাখতে হবে আজকের সামান্য এসিডিটি আগামীতে আপনার ব্রেক আপের কারন হতে পারে। তাই কিছু নিয়ম মেনে এসিডিটি দুর করুন। সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড কব্জায় রাখুন।

Post a Comment

0 Comments