Ticker

6/recent/ticker-posts

ভৌতিক ঘটনা- কবিরাজ কালিম জোলা জীবিত নাকি মৃত?

 

আমরা কেউই পুরোপুরি ভাল থাকতে পারি না।আমরা ভাল থাকার চেষ্টা করি মাত্র।
আমাদের জিবন বড় বিচিত্র। এই জীবনে সুখ যেমন আছে। তেমনই আছে কষ্ট। আছে রোগ, শোক, জড়া, ব্যাধি।
তবু্ও এই পৃথিবী ছেড়ে আমরা যেতে চাই না।
আকড়ে ধরে থাকতে চাই আমাদের নাড়ীর টান।

আচ্ছা, একজন মানুষ কি মৃত্যুকে জয় করতে পারে? এই দুনিয়ার সকলকেই তো চলে যেতে হয়।
জন্ম এবং মৃত্যুর সন্ধিক্ষনেই আমাদের জীবন।

পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে প্রত্যেক প্রানীকেই
মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে।
তারপরও যুগযুগ ধরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা অব্যাহত রেখেছে মৃত্যুকে জয় করার।
একটি অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী আমি।
যার কোন ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি।
এর কোনো ব্যাখ্যা হয় না।
কালিম জোলার জীবনে ঘটে যাওয়া এমন
একটি অবিশ্বাস্য লোমহর্ষক ঘটনা আমি
আপনাদের আজকে শোনাবো।



ঘটনাটি ১৯৮০ এর দিকের। এবং এখনো চলমান। কেনো চলমান সেটি এই লেখার শেষে পরিস্কার হবে আশা করি।

আমার গ্রামের মেহের আলী। যার কাছ থেকে ঘটনাটি কালেক্ট করা।


তখন বর্ষা কাল।

থেকে থেকেই বৃষ্টি। কাচারি ঘরে বসে

অদ্ভুত সুরে একটি বই পরতেন কালিম জোলা।(জোলা একটি বংশের নাম।)

কাপড় বুনে যারা তাদের আমাদের গ্রামের ভাষায় জোলা বলে।    

কোনো কাজ না থাকায় মেহের আলী(আমার প্রতিবেশী) এবং তার দুই বন্ধু
সেই কাচারি ঘরে যেত।
এবং কালিম জোলার সাথে বসে গল্প করতো।
কালিম জোলার বয়স তখন ৩৫কি ৩৬ হবে।
সম্পর্কে প্রতিবেশী কাকা হত মেহের আলীর।

বলে রাখা ভালো কালিম জোলা কালো যাদু করতো।গ্রামে তার কোন কদর ছিল না।
কারো সাথে তেমন মিশতো না। কিন্তু মেহের আলী খেয়াল করতো ,কালিম জোলার ডাক নাম অনেক দূর পর্যন্ত। অনেক দূর থেকে সব অচেনা 
লোক আসতো তার কাছে। 
সমাধান নিয়ে চলে যেত। মেহের আলী,  কালিম জোলার বিভিন্ন কাজ খুব কাছ থেকে 
দেখতে পেরেছিল।

মোরগ এর গলা কেটে সেটি শিল পাটা দিয়ে
বেটে পোষা বিড়ালকে খাওয়ানো,
গাছের ডাল দিয়ে খাতার পাতায়
অদ্ভুত লেখনী। কবরস্থানে রাত্রি যাপন। মৃত মানুষের হাড় সংগ্রহ।
অনেক কিছুই দেখেছিল সে।

একদিনের ঘটনা।মেহের আলী ও তার বন্ধুরা 
কালিম জোলা কে হাশার ছলে
জিজ্ঞেস করলো কাকা আপনি যে এইসব কুফুরী করেন। আপনার ভয় করে না?
একদিন তো মরতে হবে।
হিসাব হবে। আপনি জাহান্নামে যাবেন।
তখন কি করবেন?


উত্তরে কালিম জোলা যেটি বলতো
সেটি বলতে আমার ইচ্ছে করছে না।
বোঝার সুবিধার্থে আমাকে বলতে হচ্ছে।
কালিম জোলা তখন মেহের আলীকে 
বলতো, হিসাব বলে কিছু নাই।

আমরন, তো মরন নাই।

আমরন ভেঙে যদি মরন হয়
তবে হিসাব এর খাতা বন্ধ হয়ে যাবে।
হাশরের ময়দানে সবাই দাঁড়াবে।
সাদা কাপড় পরিহিতা এক মহিলা এসে
সব হিসাব এর খেলা বন্ধ করে দিবে।

ধর্ম নিয়ে এভাবে কটুক্তি করায় মেহের আলী গ্রামের সবাইকে এই বিষয়ে ভালো করে জানায়।
গ্রামে মোটামুটি একটা সিদ্ধান্ত হয়। কালিম জোলা এবং তার পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়।

গ্রাম থেকে জানানো হয় এইসব নাফরমানি না ছাড়লে তাদের পরিবারের কারো মৃত্যুতে
গ্রামের কেউ জানাযা দিবে না।
তখন কালিম জোলা শুধু একটা কথা বলে
আমার জানাযা তোদের দিতে হবে না।
মরলে তো দিবি।

অনেক দিন কেটে যায়।
হঠাৎ করেই কালিম জোলা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তার বলিষ্ঠ দেহ যেন ভেঙে যায় ক্রমশই।
হাসপাতালে নেওয়া হয়।ডাক্তার জানায় তার বাচার কোন সম্ভাবনা নেই।
এবং সময় সীমাও নির্ধারন করে দেওয়া হয়।
তাকে যখন গ্রামে আনা হয়।
সবাই তাকে দেখতে আসতে থাকে।
সৃষ্টিকর্তার শাস্তি৷ দুনিয়ার উপর এও যে হয় সেটা দেখার জন্যই হয়তো।
কিন্তু দেখতে যাওয়া সবাই রাগ করে থাকলেও
কালিম জোলার অবস্থা দেখে খুবই মর্মাহত হন।
খুবই খারাপ অবস্থা।

অবাক করা বিষয় হলো ডাক্তারের বেধে দেওয়া সময় অতিবাহিত হওয়ার পরো কালিম জোলা মারা যায়নি। সে আরো ছটফট করতে থাকে।
নিজেই নিজের গলা চেপে ধরে।
বুক চাপড়াতে থাকে।

একদিন বিকেল বেলা। মেহের আলী তখন ওই বাড়িতেই। কালিম কাকা তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে ওই কাচারি ঘরের দিকে হাত তুললেন।
কালিম কাকার স্ত্রী সাথে সাথে কান্না শুরু করলেন।
আধো আধো গলায় কালিম কাকা বললেন 
কাচারি টা ভেঙে ফেল।

পর দিন সকালে লোক এনে কাচারি ঘর টা ভেঙে ফেলা হল। আর এই দিকে কালিম কাকা
ছটফট করে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।
কাচারি ঘরের সাথে তার এমন কি সম্পর্ক সেটা সবার কাছেই একটা রহস্য।

ঘটণা এখানে শেষ হলে হয়তো ভাল হতো।
কিন্তু এর শেষটা যে অনেক দূরে।
ওই যে শুরুতে বলেছিলাম, ঘটনা এখনো চলমান।
কালিম জোলা কে জানাযা করা হবে।
বাড়ির উঠোনে বেশ মানুষের সমাগম।
পরিবারের লোক জন যখন শেষ দেখা দেখছিল তখন তার মেয়ে চিৎকার করে উঠলো।

আব্বা মরে নাই। আব্বা বেচে আছে।
চোখ মিট মিট করে।উপস্থিত জনতা ভয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে।
এমন একটা পরিস্থিতি সত্যি আর কোথাও ঘটেছে কিনা আমার জানা নাই।
সবাই দূর থেকে দেখছে। লাশটি কাফনের কাপরের মধ্যে নড়তে থাকে।
একটা সময় পর হাত বের করে আঙুলে কামর দিয়ে রক্ত ঝড়ায়।
তার পর কাফনের কাপরে লিখে, বই টা। 
আর লিখতে পারে না।

কালিম জোলার মেয়ে বই টা এনে পুরিয়ে দেয়।
আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায় কালিম কাকা।
কিছু মানুষ তখনও ছিল । 
তারা কোন রকম জানাযা করে কবরস্থ করে কালিম জোলাকে।


বেশ কিছু দিন পর থেকে গ্রামে আরেক টা সমস্যা দেখা দেয়। অনেক রাতে কেউ যখন ওই কবরের পাশ দিয়ে আসে তখন অদ্ভুত সুর শুনতে পায়  । 
কেমন একটা অজানা ভাষায় কেউ কিছু বলছে।
গ্রামে আতংক শুরু হয়।
কেউ আর ওই দিক দিয়ে যাতায়াত করে না।
একটা সময় ওই পরিবার টি সমাজ থেকে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরিশেষে তারা ভিটে মাটি বিক্রি করে চলে যায়। কোথায় চলে যায় কেউ সেটা জানে না।  
এর প্রায় ১৫ বছর পর।
১৯৯৬ এর সময়, জলিল নামে আমাদের গ্রামের  এক লোক রংপুরে যায় দৈনিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে।
সে বাজারে বসা। হটাৎ করে সে একজন কে দেখে চমকে উঠে।
ওই লোক টি হবহু কালিম জোলার মত।

জলিল,  নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিল না। এটা কিভাবে সম্ভব।
সে অগ্যত সেই লোকটার পিছন পিছন যায়।
এবং বাড়ি পর্যন্ত চলে যায়। ভয়ে ভয়ে ভিতরে ঢুকে পানি চায়।
এবার সে আর ঠিক থাকতে পারে না।
এক মহিলা বের হয়। ইনি হলেন কালিম জোলার স্ত্রী।  জলিল কে দেখেও কালিম জোলার স্ত্রী অবাক হয়। চমকে উঠে।
জলিল আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেনি।
কিছু হয়নি এমন একটা ভাব করে সে 
গ্রামে ফিরে আসে।

গ্রামে এসে সবাই কে বললে  বেশ কিছু লোক কিছু দিন পর রংপুরে খোজ করতে যায়।
কিন্তু সেখানে যারা ভারা থাকতো তারা নাকি চলে গেছে।


এর পর আর কখনো কালিম জোলাকে কোথাও দেখা যায়নি। তার পরিবারের কারো কোনো খোজও কেউ জানে না।
সবার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন।
সেই কাচারি ঘর, সেই বই এর সাথে কালিম জোলার মৃত্যুর কি রহস্য ছিল?
সেগুলি পুড়িয়ে ফেলার পর কেনো কালিম জোলা মারা গেলেন।
জানাযা হওয়ার পর, ১৫ বছর পরে
কালিম জোলাকে কিভাবে রংপুরে তার পরিবারের সাথে বসবাস করতে দেখা গেল?
তাহলে কি কালিম জোলার স্ত্রী সব রহস্য জানতো?
হাজারো প্রশ্নের কোন সমাধান হয়নি।
কিছু প্রশ্নের উত্তর হয়না।
সময়ের প্রবাহমানতায় আমরা শুধু মেনে নিতে বাধ্য হই।

কলমে--- ধুপছায়া




Post a Comment

0 Comments