Ticker

6/recent/ticker-posts

ছোট গল্প -বেলকনি / আমাদের বেলকনি খুবই অদ্ভুত


আমার বেলকনিটা বড় অদ্ভুত।
সে আমার এক অন্যরকম আপনজন।
আমি আকাশ দেখি।
আমি সন্দিহান, আমি বাতাস ছুই,
নাকি বাতাস আমায় ছুয়ে যায়।
তবে যাই হোক, পৃথিবীর কোনো
কিছুই যে সমান্তরালে চলে না।
আমি তা নিশ্চিত।
আমি এক কাপ কফি হাতে বেলকনিতে
এসে দাড়াই।
আকাশ দেখতে পাইনা।
কখনো দেখি চাদের মায়া ভরা জ্যোস্না,
কখনো বা তারাদের মেলা।
বাতাসের গান শুনি। একটু কষ্ট করে স্থির থাকলে
কখনো বা শুনতে পাই জোনাকির গান।
আমি আবার স্থির থাকতে পারি না।
বড্ড অস্থির আমি।

আমার বেলকনির ঠিক সামনে
পিচঢালা রাস্তা। নতুন কংক্রিটের এক নতুন ভবন। একটু বা দিকে হবে।
চোখ যায়। মুঠোফোনে ব্যস্ত এক তরুণী।
নতুন কংক্রিটের ভবনের মতই নতুন প্রেম হয়তো।
আমার কফি খাওয়া শেষ হয়।
শুধু শেষ হয়না মুঠোফোনের ব্যস্ততা।
আচ্ছা, এই সম্পর্ক কি কংক্রিটের মতই শক্ত।
হয়তোবা না। হয়তোবা কংক্রিটের চেয়েও শক্ত।

ডান দিকের বেলকনিটা আমার খুব চেনা।
সে আমার মতই অস্থির। পৃথিবীতে একা মানুষগুলি বড্ড অস্থির প্রকৃতির হয়।
রোজ রুটিন মাফিক ভেসে আসে চাপা কান্না।
উচ্চস্বরে কান্নার মাঝে একরকম সুখ আছে।
কিন্তু চাপা কান্না?
সে তো বুকের অস্ফুট ধ্বনি।

তিন তলার বেলকনিটা ধোয়াশা।
যেনো বছরের বারোটা মাস কুয়াশা
মুড়িয়ে রাখে বেলকনিটাকে।
জীবনে কত টা কষ্ট থাকলে তামাক
মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়? এর উত্তর বাপু
আমি জানি না। তবে এটা জানি, এদের চোখে পানি থাকে না।
পানিগুলো বাষ্প হয়ে নিকোটিনের ধোয়ারুপে
বের হয়ে যায়।

পাশের বেলকনিটা কিন্তু দারুণ আমেজে আছে।
রাত বাড়তেই হরেক রকমের গান।
ভাল গিটার বাজায় লোকটা।
কিন্তু গানের গলা?
সে আর নাই বলি। আমাদের যা নেই, তা পাওয়ার ইচ্ছে আমাদের বেশি।

চার তলার বেলকনিটা প্রায় চুপচাপ। মাঝে মাঝে
ফুটফুটে এক ছেলেকে দেখি।
বয়স কতই আর হবে। ছয় কিংবা সাত।
রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে ঘন্টা ক্ষানেক।
আমার আবার চোখে জ্যোতি কম।
সেকারনে আমি একটু পরিষ্কার দেখি।
কারন চশমা নিয়েছি যে।
আমি দেখি, ছেলেটা মুখ নাড়ায়।
জিজ্ঞেস করেছিলাম, কি করে।
সে বলেছিল- ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি।
আব্বু যেন আম্মুকে আর না মারে।

ছয় তলার বেলকনিটা আমি
ঠিকঠাক দেখতে পাই না।
এক্টু বেশিই উপরে হয়ে যায় তাকানোর জন্য।
তবে যেটা দেখি, মন প্রান শীতল হয়ে যায়।
শীতল পাটিতে কখনো ঘুমাইনি।
আমার মনে হয় দুই অনুভুতি প্রায় একইরকম।
ষাটোর্ধ হবে দুজনের বয়স।
একটু বেশিও হতে পারে।
প্রেমিক টি চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে প্রেমিকার।
আমি প্রেমিকার মিষ্টি হাশি দেখতে পাই।
কুচকে যাওয়া মুখের সে এক অন্যরকম হাশি।
একসময় তারা কফি খায়। হাত ধরে বসে।
গোধূলি লগ্নে তাকায় আকাশ পানে।
ফেলে আসা দিন গুলি হয়তো ভাবে।
আমি আমার বেলকনিতে
দাড়িয়ে ভাবি, এইতো আমিও
আছি আপনাদের এই কফির আড্ডায়।

আমাদের বেলকনি অদ্ভুত না।
অদ্ভুত হলাম আমরা। বেলকনি শুধু আমাদের
এই অদ্ভুত কর্মকান্ডের সাক্ষী হয়ে রয়।

কলমে-- মির্জা নয়ন 

Post a Comment

2 Comments

  1. In this blog I get a great post please also visit my blog I post a great content : http://www.justforsolutiom.com

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thank you so much for your compliment.
      And of course i will visit your blog. Stay with us. Thanks again dear.

      Delete